Top 9 Scientific Miracles of Quran Proved Recently | Islamic Solution

আসমানী কিতাব বা ঐশ্বিক গ্রন্থ বলতে এমন কতকগুলো গ্রন্থকে বোঝানো হচ্ছে, ইসলাম ধর্মমতে মুসলমানগণ যে গ্রন্থগুলোকে ঈশ্বরপ্রদত্ত গ্রন্থ বলে বিশ্বাস করেন। ইসলাম ধর্মে যে ৭টি বিষয়ের উপর বিশেষ করে ঈমান আনতে বা বিশ্বাস স্থাপন করতে বলা হয়েছে তার মাঝে একটি হলো এই যাবতীয় আসমানী কিতাব, যা সরাসরি ঈশ্বরের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছিলো। ইসলাম ধর্মমতে, পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে সর্বমোট আসমানী কিতাব পাঠানো হয়েছে ১০৪খানা। তার মধ্যে ৪খানা হলো প্রধান আসমানী কিতাব ও বাকি ১০০খানা সহীফা। প্রধান চারখানা আসমানী কিতাব হলো: তৌরাত, যা অবতীর্ণ হয় ঈশ্বরের বাণীবাহক হযরত মুসা [আ.]-এর উপর,[১] যাবুর, যা অবতীর্ণ হয় ঈশ্বরের বাণীবাহক হযরত দাউদ [আ.]-এর উপর, ইনযিল, যা অবতীর্ণ হয় ঈশ্বরের বাণীবাহক হযরত ঈসা [আ.]-এর উপর, এবং আল‌‌-কোরআন সর্বশেষ এবং পরিপূর্ণ আসমানী কিতাব, যা অবতীর্ণ হয় ঈশ্বরের বাণীবাহক হযরত মুহাম্মদ [স.]-এর উপর।[২] “তৌরাত ও ইঞ্জিল এখন সর্বশেষ কিতাব কোরআন দ্বারা বাতিল বা অচল হয়ে গেছে।” কিছু কিছু লোক দাবি করেন যে, শেষ-বাণী কোরআন শরীফের আগমনেই তৌরাত-ইঞ্জিল এখন অচল ও বাতিল হয়ে গেছে । এই কাল্পনিক দাবির জন্য কিন্তু কোরআন বা হাদিসে বিন্দুমাত্র ভিত্তি নেই, বরং সেটা আসলে কোরআন-বিরুদ্ধ একটি মনগড়া ধারণা। এই দাবি সত্য হলে কোরআন শরীফ ইহুদী-খ্রীষ্টানদের বলত না— قُلْ يَـأَهْلَ الْكِتَـبِ لَسْتُمْ عَلَى شَىْءٍ حَتَّى تُقِيمُواْ التَّوْرَاةَ وَالإِنجِيلَ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيْكُمْ مِّن رَّبِّكُمْ “তৌরাত, ইঞ্জিল ও যা তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে …তা পালন কর।” (মায়িদা ৬৮) —বরং বলতে, “তৌরাত ও ইঞ্জিল বাদ দিয়ে শুধু কোরআন শরীফই পালন করুন।” আবার কোরআন শরীফে বলা হত না— وَلْيَحْكُمْ أَهْلُ الإِنجِيلِ بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فِيهِ وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ “ইঞ্জিল-অনুসারীগণ তদানুযায়ী বিচার করুক। (মায়িদা ৪৭) —বরং বলা হত “ইঞ্জিল-অনুসারীগণ এখন ইঞ্জিল বাদ দিয়ে কোরআন পালন করুক।” তাই এটা পরিষ্কার যে, কোরআন শরীফ কখনও দাবি করেননি যে সেটা আগের কিতাব বাতিল করতে আসল, বরং সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা সমর্থন করতে আসল (মায়িদা ৫:৪৮) স্পষ্ট আরবী ভাষাই (আশ-শো’আরা ২৬:১৯৫)। এই দাবি সত্য হলে ঈসা মসীহ্ তৌরাত বাতিল করে ইঞ্জিল প্রতিষ্ঠিত করতেন, কিন্ত তিনি সুস্পষ্টভাবে বলতেন যে তিনি তৌরাত বাতিল করতে আসেননি (ইঞ্জিল, মথি ৫:১৮) বাতিল (মান্‌সুখ)? মাঝে মাঝে বাকারা ১০৬ আয়াতে বর্ণিত মানসুখ বিষয়টি দ্বারা এই দাবির সমর্থনে ব্যবহার করা হয়: “আমি কোন আয়াত (آيَةٍ) রহিত করিলে কিংবা বিস্মৃত হইতে দিলে তাহা হইতে উত্তম কিংবা তাহার সমতুল্য কোন আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহই সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।” (বাকারা ২:১০৬) কিন্তু এই আয়াতে অতি পরিষ্কারভাবে বলা হচ্ছে যে “নাশ্খ” (نسخ) বা বাতিল-করা জিনিস হচ্ছে কোরআনের আয়াহ্‌ , কিতাব নয়। এই প্রসঙ্গে শত হাদীস আছে, কিন্তু এই প্রত্যেকটি হাদিসে বাতিল আয়াতের সম্পর্কে বলা হয়, কখনও বাতিল (نسخ) কিতাব নয়। এইসব হাদিস থেকেও বোঝা যায় যে এই আয়াতে কোরআনের বিভিন্ন বাতিলকৃত আয়াত সম্পর্কে বলা হচ্ছে, কিতাব নয়। অনুপযুক্ত তুলনাগুলি বিভিন্ন কিতাব আগেকার অচল রাজার আইনের সাথে তুলনা করে অথবা অচল কম্পিউটারের প্রসেসোরের সঙ্গে তুলনা করার মাধ্যমেও এই যুক্তি খাড়া করা হয়। যেভাবে নতুন রাজার আমলে আগের আইন বাতিল হয় এবং পুরাতন প্রসেসোর বাদ দিয়ে নতুন মডেল লাগানো হয়, সেভাবেই বলা হয় আগের কিতাব এখন অচল হয়ে গেছে। কিন্তু এমন তুলনা করা যায় না, কারণ কম্পিউটার ও আইন সবই বাতিল করা হয় কারণ সেগুলো ত্রুটিযুক্ত ও অক্ষম। আল্লাহ্‌র চিরন্তন ও পবিত্র কালামকে ত্রুটিযুক্ত অক্ষম জিনিসের সাথে তুলনা করাতে সয়ং আল্লাহ্কে অপমান করা হয়—আল্লাহ্তা’লা কি ত্রুটিযুক্ত বাণী দিতেন? মানুষের আইন ও প্রযুক্তি সীমিত ও ত্রুটিযুক্ত, কিন্তু আল্লাহ্‌র কালাম নিষ্কলঙ্ক ও ত্রুটিহীন, এবং সেটা এমন জিনিস নয় যে সেটা “পাল্টাতে” হয়। উপযুক্ত তুলনা আল্লাহ্ কালাম সম্মান করার মত একটি উপযুক্ত তুলনা হচ্ছে যে আল্লাহ্‌র ক্রমাগত অবতীর্ণ কিতাবগুলি একটি কাহিনী বা উপন্যাসের মত, যেটা পরস্পরাক্রমে বের হয়। পুরা কাহিনীর মর্ম বোঝার জন্য, অর্থাৎ আল্লাহ্‌র পূর্ণ ইচ্ছা ও পরিকল্পনা জানার জন্য, প্রত্যেকটি অধ্যায় জানতে হবে। আবার আসমানি কিতাবগুলো একটি দালানের বিভিন্ন তলার সাথে তুলনা করা যায়; নিচ-তলা বাদ দিলে উপরের সব দালানগুলো ধ্বংস হবে। সূরা মায়িদা এই রকম ‘ভিত্তি’ তুলনা ব্যবহার করে— ‘হে কিতাবীগণ! তাওরাত, ইন্‌জীল ও যাহা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হইয়াছে তোমরা তাহা প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত তোমাদের কোন ভিত্তিই নাই।’ (সূরা মায়িদা ৫:৬৮) কিতাব পরস্পর-বিরোধী হতে পারে না এমন হতে পারে যে এক যুগে আল্লাহ্ এক জাতিকে একটি নিয়ম দেন কিন্তু অন্য যুগে অন্য জাতিকে অন্য নিয়ম দেন; সেটা যুক্তিসংগত। কিন্তু একটি কিতাবে যদি বলা হয় যে শরিয়ত পালন করার মাধ্যমে নাজাত অর্জন করা অসম্ভব বরং আল্লাহ্‌র একমাত্র চিরকালের নাজাত-ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়, তাহলে আল্লাহ্‌র কালাম হিসেবে সেটা পরে পরিবর্তন করা অসম্ভব। বিভিন্ন কিতাবে বিভিন্ন বিষয় আছে-ইঞ্জিলের প্রধান বিষয় যেমন নাজাতের উপায়, কোরআনের প্রধান বিষয় তেমন মূর্তিপূজাকারীদের আখিরাত সম্পর্কে সতর্ক করা।