কোরআন আসমানী কিতাব নয় প্রশ্নের জবাবে ডঃ জাকির নায়েক যা বললেন

অপবাদঃ ডাঃ জাঁকির নায়েক নাকি বলেছেন কোরআনে ব্যাকারনগত ভুল আছে। উত্তরঃ কোরআনে ব্যাকারনগত ভুল আছে এই কথা ডাঃ জাঁকির নায়েক বলতেই পারেন না। বরং, আমেরিকাতে ডাঃ উইলিয়াম ক্যাম্পবেল এর সাথে বিতর্ক করার সময়ে ডাঃ জাকির নায়েককে এক অমুসলিম প্রশ্ন করেছিলেন, তার প্রশ্ন ছিলঃ “ডাঃ জাঁকির নায়েক আপনি বলেছেন কোরআনে কোন ভুল নেই কিন্তু আমি দেখছি যে এতে ২০ টিরও অধিক আরবি ব্যাকারনগত ভুল রয়েছে। আমি এর মধ্য থেকে কয়েকটি উল্লেখ্য করতে চাই যেমন সুরা বাঁকারা ও সুরা হাজ্জ এ বলা হয়েছে- ‘আসাবিউন’ কিংবা ‘আসাবিরীন’ এটা ১ নম্বর ভুল। ২য় ভুল হচ্ছে, আপনি বলেছেন, প্রায় একই বিষয় যা সুরা ত্ব-হা’র ৬৩ নং আয়াতে রয়েছে এটাও ভুল। এটি কি আপনি ব্যাখ্যা করতে পারেন? আর সেখানে রয়েছে আর মারাত্মক ভুল” এর উত্তরে ডাঃ জাকির নায়েক বললেনঃ “আমার ভাই একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন। আমাকে আর অধিক যথার্থ হতে হবে।তিনি ২০টি ব্যাকারনগত সমস্যার কথা বলেছেন।আর তিনি সম্ভবত আব্দুল ফাঁদির রচিত বই থেকে উল্লেখ করেছেন,বইটা কি সঠিক? কোরআন কি ভুল-ভ্রান্তির উর্ধে নয়? ” এখানে আমি ২০ টি প্রশ্নেরই উত্তর দিব কারণ আমি উল্লেখিত বইটি পরেছি। প্রথম বিষয়ে টি হচ্ছে সমস্ত আরবি ব্যাকারনই কোরআন কে সংকলিত। আর কোরআন হচ্ছে উচ্চমানের আরবি বই। এটি এমন একটি বই যেখানে সর্বচ্চমানের সাহিত্য সন্নিবেশিত রয়েছে। যেহেতু কোরআন হচ্ছে আরবি ব্যাকারনের নিদর্শন আর সকল আরবি ব্যাকারনই পবিত্র কোরআন থেকে সংকলিত সেহেতু এখানে(কোরআনে) কোন ভুলই থাকতে পারে না। আরবের অঞ্চল ভেদে শব্দের পরিবর্তন রয়েছে যেমন কোন অঞ্চলে যেই শব্দ পুরুষবাচক অন্য অঞ্চলে তা স্ত্রীবাচক। আরবের অঞ্চলভেদে ভাষার পরিবর্তন বিদ্যমান। সুতরাং আপনি কি ভুলকৃত ব্যাকারন দিয়ে কোরআন যাচাই করবেন? কখনই না।(রচনা সমগ্র;পৃ-৮৯,খণ্ড-১,অধ্যায়-২,কোরআন ও বাইবেল। লেকচারঃ Quran & Bible In The Light Of Mordern Science,Questions & Answers Session) ডাঃ জাকির নায়েকের এই কথার মাধ্যমেই প্রমাণ হয় তিনি কোরআনকে নির্ভুল মানেন। আর কোরআনে ব্যাকারনগত ভুল আছে এই কথা ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেন বলে কথাও আমি পাইনি এবং ইনশা আল্লাহ পাবোও না। অপবাদঃ “ড. জাকির নায়েকের কুরআন তিলাওয়াত শুদ্ধ নয়।” – নি:সন্দেহে প্রতিটি মুসলমানের জন্য পবিত্র কুরআন শুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করা দরকার। ইমাম সাহেবের তিলাওয়াত যদি লাহনে যলী হয় তাহলে তার ইমামতি শুদ্ধ হয় না এব্যাপারেও কারো দ্বিমত নেই। এটা ঠিক যে ড. জাকির নায়েকের আরবী উচ্চারণ খানিকটা আটকে যায়। শুধু আরবী উচ্চারণই নয় বরং যারা ড. জাকির নায়েকের আলোচনা শুনেছেন তারা দেখেছেন যে, ড. জাকির নায়েকের ইংরেজি ভাষা ও বক্তব্যও অতোটা শ্র“তিমধুর নয়। তার ইংরেজি শব্দ উচ্চারণও আটকে যায় এবং শব্দগুলো খানিকটা ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসে। জন্মগতভাবে কিংবা কারণবশত: যদি কারো মুখে জড়তা থাকে তাহলে এমনটি হতে পারে। তার তিলাওয়াত শুনে আমার যা মনে হয়েছে তা হলো, শারীরিক কোন ত্র“টি থাকার কারণেই সম্ভবত: তার শব্দের উচ্চারণ অতটা শ্র“তিমধুর নয়। যারা আগ্রহ করে তার আলোচনা শুনতে যান বা শুনেন তারা তার কথা এজন্য শুনেন না যে তাতে সূর, তাল, লয় কিংবা উচ্চাঙ্গের সাহিত্য-লালিত্যপূর্ণ ভাষা ও শৈল্পিক ব্যাকরণ আছে। বরং তারা তার থেকে বিভিন্ন বিষয়ের উপর তথ্য-তত্ত্ব এবং যৌক্তিক ও প্রামাণ্য আলোচনা শোনার জন্য। তবে এটা যদি শারীরিক কারণে হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কিছু করার নেই। কিন্তু যদি তিলাওয়াত ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এটা দূর করার কোন ব্যবস্থা থাকে তাহলে তা করা দরকার। আর যদি এটি শারীরিক সমস্যা নাও হয়ে থাকে তাহলেও এটি এমন কোন বিষয় নয়, যার ফলে তার জন্য দীনের দাওয়াত দেয়া বন্ধ রাখতে হবে। উচ্চারণ সমস্যার কারণে যেমনিভাবে একজন মুসলিমের উপর নামাজ পড়া, রোজা রাখার বিধান রহিত হয় না, একইভাবে উচ্চারণ সমস্যার কারণে ড. জাকির নায়েককে ‘দীনের দাওয়াত ও তাবলীগ’ বন্ধ করে দিতে হবে এমনটিও আবশ্যক নয়। বরং এটা তো আরো প্রশংসনীয় যে, হযরত বিলাল রা. কিংবা হযরত মূসা আ. এর মতো মহান ব্যক্তিরা যেমন নিজেদের উচ্চারণ সমস্যা থাকা সত্ত্বেও দীনের দাওয়াত নিয়ে এগিয়ে গেছেন তেমনি জাকির নায়েকও কষ্ট করে হলেও দীনের দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছেন। সর্বোপরি ড. জাকির নায়েক যেহেতু ইমাম কিংবা কিরাআতের প্রশিক্ষক নন, তাই এই বিষয়টি দিয়ে তাকে অভিযুক্ত করা কোনভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। অপবাদঃ পর্দার ব্যাপারে ড. জাকির নায়েকের শিথীলতা। তার অনুষ্ঠানে পুরুষ-মহিলাদের অংশগ্রহণ। – মহিলাদের মুখমন্ডল পর্দার অন্তর্ভুক্ত হবে কি না তা নিয়ে স্বয়ং ইমামদের মধ্যেই ইখতেলাফ রয়েছে। মহান আল্লাহ মহিলাদের পর্দার ব্যাপারে বলেছেন, وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلا مَا ظَهَرَ مِنْهَا. অর্থ: “আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর ‘যা সাধারণত প্রকাশ পায়’ তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না।” (সূরা নূর, আয়াত ৩১) এই আয়াতে ‘যা সাধারণত প্রকাশ পায়’ বাক্যের ব্যাখ্যায় হাত, পায়ের পাতার সাথে মুখকেও খোলা রাখা যাবে বলে হযরত ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ ও আতা (রহিমা.) মত দিয়েছেন। সুতরাং মহিলারা এটা খোলা রাখতে পারবে। যদিও আহনাফের মতে বর্তমান সময়ে মহিলাদের মুখমন্ডল খোলা রাখার দ্বারা ফিতনা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় এটিও ঢাকতে হবে। ড. জাকির নায়েকও তার If Label Shows Your Intent Wear It বা “মুসলিমদের পোষাক কেমন হওয়া উচিত?” শীর্ষক আলোচনার আলোচনায় মহিলাদের পর্দার ব্যাপারে ইমামদের বিভিন্ন মতের কথা সমানভাবে তুলে ধরেছেন। এক্ষেত্রে আমাদের মতের সাথে তার দলীল নির্ভর দ্বিমত থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে তার প্রামাণ্য বক্তব্যের বিপক্ষে তার সম্পর্কে কটু মন্তব্য করা শোভা পায় না।