ভারত বাংলাদেশে হামলা করে তবে তা ঠেকাতে কতটুকু সক্ষম বাংলাদেশ ? | Daily Reporter

ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ মর্টার নিয়ে প্রস্তুত বিডিআর জওয়ান রা বিগত ১৬ এপ্রিল ২০০৫ তারিখে আখাউড়া সীমান্তে প্রতিবেশী দেশ কর্তৃক ২০/২৫ জন সশস্ত্র বিএসএফ সদস্য এবং ৬০/৭৫ জন ভারতীয় নাগরিকসহ বাংলাদেশের ৩০০ গজ অভ্যন্তরে সীমান্তবর্তী হীরাপুর গ্রামে অনুপ্রবেশ করে। অনুপ্রবেশকারী বিএসএফ সদস্যগণ ভারতীয় নাগরিকদের সহায়তায় হিরাপুর গ্রামে ব্যাপক লুটতরাজসহ নিরীহ নারী ও শিশুদেরকে মারধর করে। গ্রামবাসী বাধা দিলে বিএসএফ গুলি বর্ষণ শুরু করে এবং গ্রাম দখল করে রাখে। বাংলাদেশী নাগরিকদের সশস্ত্র বিএসএফ এর কবল থেকে গ্রামবাসীদের উদ্ধার এবং বিএসএফ কে বাংলাদেশের ভূখন্ড থেকে বিতাড়িত করার জন্য উপস্তিত বিডিআর সদস্যদের সাথে নিয়ে ঐ সময় বিএসএফ এর সাথে সম্মুখ সংঘর্ষে অংশগ্রহণ করি। এটি ছিল আমার সামরিক জীবনের এক বিরল অভিজ্ঞতা, তা লিখে প্রকাশ করা আমার জন্যে কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আমার নেতৃত্বে বিডিআর ও বিএসএফ এর মধ্যে সামনা-সামনি প্রায় ৪/৫ ঘন্টা তীব্রভাবে গুলি বিনিময় হয়। গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে বাংলাদেশ সীমান্তের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশকারী বিএসএফ এর কোম্পানী কমান্ডার, এ্যাসিটেন্ট কমান্ড্যান্ট শ্রী জীবন কুমার গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত এবং কনষ্টেবল কে কে সুরেন্দার গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতরভাবে আহত হন (পরে মারা যাই বলে শুনেছি)। তিব্র গুলি বিনিময়ের কারনে সশস্ত্র বিএসএফ দল অন্য কোন উপায় না দেখে কোম্পানী কমান্ডারের লাশ ও আহত কনষ্টেবল (অস্ত্রসহ) কে ফেলে রেখে বাংলাদেশের ভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। আমরা বিএসএফ এর কবল থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের জানমাল রক্ষা করতে সমর্থ হই। পরবর্তীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ২ জনকে বাংলাদেশ রাইফেলস পদক ৩ জনকে প্রেসিডেন্ট রাইফেলস পদক খেতাবে ভূষিত করেন যা বিডিআর এর সর্বোচ্চ সম্মান পদক। এবং ৮ জন কে ডিজি’র কমেনডেশন মেডেল প্রদান করা হয়। বিগত ২৪ শে ফেব্রুয়ারী ২০০৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক রাইফেলস সপ্তাহ- ২০০৯ প্যারেড শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে বিডিআর এর সর্বোচ্চ পদক “বাংলাদেশ রাইফেলস্ পদক” (বিআরএম) পদকটি আমাকে নিজ হাতে পরিয়ে দেন। সীমান্ত সংঘর্ষে উপস্থিত বুদ্ধি, অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ আমাকে ঐ উপাধি প্রদান করা হয়। তবে আমি কি পেলাম বা না পেলাম এটা বড় কথা নয়! আমার দেশের মাটিকে রক্ষা করাটাই ছিল আমার কর্তব্য এবং তা পেরেছি এটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া। এছাড়া ঐ সময়ে আখাউরা উপজেলার সকল স্তরের সাধারণ জনগণ ও বিশেষ করে হীরাপুর গ্রামবাসীগন আমাকে যে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা দিয়েছেন সেটাই বা কম কিসের????? লেখক: লেঃ কর্নেল (অবঃ) কামরুজ্জামান