জাল দিয়ে মাছ ধরার মহা উৎসব দেখেছেন? অসাধারণ মজা পাবেন। রাউজানের নসরত বাদশার দিঘীতে । wild fish catch

বিশাল বড় দিঘীর টলমলে স্বচ্ছ জল। এই জলের মধ্যেই নির্দিষ্ট স্থানের দূরত্ব বরাবর বাঁশ ও কাঠের তৈরি মাচা। মাচার উপর জাল নিয়ে তৈরি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা। মাইকে ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথেই প্রতিযোগীরা একসাথে পানির উপর ছুড়ে ফেলল জাল। কার চেয়ে কে বেশি মাছ ধরবে বা সবচেয়ে বড় মাছটি কার জালে আটকাবে শুরু হল সে প্রতিযোগিতা। কারণ দিঘীর সবচেয়ে বড় মাছ শিকারীর জন্য পুরষ্কার হিসেবে আছে একটি মটর সাইকেল। উপরের বর্ণনাটি রাউজান উপজেলার গহিরার দলইনগরে অবস্থিত নশরত শাহ'র দিঘীতে আয়োজিত ব্যতিক্রমী এক মাছ ধরা প্রতিযোগিতার। বুধবার (১০ মে) সকাল ১০ থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে আড়াইশ প্রতিযোগী। দিঘীর মধ্যে তৈরি প্রতিটি মাচা আয়োজক কমিটির কাছ থেকে প্রতিযোগীরা কিনে নেন ১০ ও ৭ হাজার টাকায়। দিঘীর কিনারা ঘেষা মাচাগুলোর দাম নির্ধারণ করা হয় ৭ হাজার টাকা এবং মাঝখানের মাচাগুলো ১০ হাজার টাকা। প্রতি মাচায় সর্বনিম্ন ৩ জন থেকে সর্বোচ্চ ৭ জন করে প্রতিযোগী ছিল। প্রতিযোগিতাটি সকাল ৯টায় শুরু করার কথা থাকলেও কিছু প্রতিযোগী আসতে দেরি করায় সকাল ১০টা থেকে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার সাথে সাথেই প্রতিযোগিরা দিঘীতে জাল ফেলতে শুরু করে। একের পর এক জাল ফেলে শুরু হয় মাছ ধরা। জালে বড় বোয়াল, পাঙ্গাস কিংবা ব্রিকেট মাছ ধরা পড়লেই প্রতিযোগীরা আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠছিলেন। তাদেরকে করতালি ও হই-হুল্লোড়ের মাধ্যমে উৎসাহ দিচ্ছিলেন চারপাশে সবুজ বৃক্ষরাজি দ্বারা পরিবেষ্টিত প্রায় ৬০ কানি পরিমাপের নশরত শাহ দিঘীর চারপাশে দাঁড়িয়ে প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে আসা প্রায় হাজার দশেক দর্শক। পুরুষদের পাশাপাশি অনেক নারীরাও দিঘীর পাড়ে বসে উপভোগ করেছেন ব্যতিক্রমী এ প্রতিযোগিতা। ফটিকছড়ি থেকে প্রতিযোগিতা দেখতে আসা মো. রায়হান সিপ্লাসকে বলেন, ইচ্ছে ছিল নিজেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার। কিন্তু সিট না পাওয়ায় অংশ নিতে পারিনি। তবে দেখেই অনেক ভালো লাগছে। এ ধরণের ব্যতিক্রমী আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়। প্রতি বছর এ ধরণের প্রতিযোগিতা আয়োজন করা উচিত। ব্যতিক্রমী এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ দিদারুল আলম ও সাইফুল আলম। মো. দিদারুল আলম সিপ্লাসকে বলেন, মাছ ধরাকে আমরা একটি উৎসবে পরিণত করতে চেয়েছি। আমাদের সে উদ্দেশ্য সফল। দুর-দুরান্ত থেকে এখানে প্রতিযোগীরা এসেছেন মাছ ধরতে এবং কেউই খালি হাতে ফেরেননি। এছাড়া সবচেয়ে বড় মাছ শিকারী তিনজনের জন্য রাখা হয়েছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার। সাইফুল আলম সিপ্লাসকে বলেন, দেশের গ্রামে-গঞ্জেও এখন পুকুর, দিঘীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অথচ এগুলো আমাদের সম্পদ। তাই এগুলো রক্ষায় আমাদের কাজ করতে হবে। এ ধরণের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। প্রতিযোগিতায় ১১ কেজি ওজনের একটি বোয়াল মাছ ধরে প্রথম পুরষ্কার লাভ করেন হাটহাজারীর চারিয়ার মিজানুর রহমান। তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, প্রথম পুরষ্কার পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। বড় মাছটি বিক্রি করব না। বাড়িতে নিয়ে যাবো।