বন্ধুকে পথে বসিয়েই মুসা আজকে এত বড়লোক – জানুন সেই হতভাগা বন্ধুটির কথা

হাসিনা রেহানাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া সেই সানাউল হক ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনার পরই বদলে গেলেন রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত সানাউল হক। সেদিন বেলজিয়াম দূতাবাসের বাসায় অবস্থান করছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। ঘটনার পর তাঁদেরকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন এই রাষ্ট্রদূত। তখন জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী (পরে স্পিকার) টেলিফোনে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নিরাপত্তা দিতে অনুরোধ করলেও সানাউল হক তা প্রত্যাখ্যান করেন। এমনকি শেষ মুহূর্তে হুমায়ুর রশীদ চৌধুরী জার্মানির সীমান্ত পর্যন্ত শেখ হাসিনার পরিবারকে নিরাপদে দূতাবাসের গাড়ি দিয়ে পৌঁছে দিতে অনুরোধ করলেও সানাউল হক তাতেও রাজি হননি। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী পরবর্তীতে তার এক সাক্ষাৎকারে এ সম্পর্কে বলেছেন, সানাউল হক অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, ‘আমাকে কেন এসব ঝামেলায় জড়াচ্ছেন? আমি এসব জটিলতায় পড়তে চাই না।’ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যখন ঢাকায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়, তখন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেলজিয়ামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া এর আগে একটি গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানিতে পড়তে গিয়েছিলেন এবং তার সঙ্গেই জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন শেখ হাসিনা ও তার দুই সন্তান জয় ও পুতুল। আগস্টে ওয়াজেদ মিয়া কয়েকদিনের ছুটি পান। এদিকে শেখ রেহানা ৩০ জুলাই বেড়াতে যান শেখ হাসিনার কাছে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৫ আগস্ট ওয়াজেদ মিয়া সবাইকে নিয়ে কয়েকদিনের জন্য বেলজিয়াম বেড়াতে যান। এ বিষয়ে বিভিন্ন বই ও সাক্ষাৎকার থেকে জানা গেছে, ১৫ আগস্ট যখন শেখ হাসিনা ও তার পরিবার বেলজিয়াম বেড়াতে যান তখন সানাউল হক ভীষণ খুশি হয়েছিলেন। তার বাসায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। ওইদিন রাত তিনটা পর্যন্ত সানাউল হকের স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে আড্ডা চলে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার। শেখ রেহানা তার এক স্মৃতিচারণে এ সম্পর্কে বলেন, রাত তিনটা পর্যন্ত সানাউল হকের মেয়ে ও অন্যদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন আর জোরে জোরে হাসছিলেন শেখ রেহানা। এসময় ওয়াজেদ মিয়া বারবার এসে আস্তে হাসার জন্য বলেন। রাত তিনটার দিকে এসে ওয়াজেদ মিয়া শেখ রেহানাকে বলেন, এত হাসাহাসি করা ভালো না। বেশি হাসলে সারাজীবন কাঁদতে হয়। সেদিন সানাউল হক তাদের কিছুদিন বেলজিয়ামে তার বাড়িতে থাকার জোর অনুরোধও করেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বদলে যান এই রাষ্ট্রদূত। জানা গেছে, সানাউল হককে খুব স্নেহ করতেন বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনেকের আপত্তি সত্ত্বেও তাকে রাষ্ট্রদূত করেছিলেন। হুমায়ুর রশীদ চৌধুরী তার এক প্রবন্ধে লিখেছেন, সম্ভবত বঙ্গবন্ধুকে হত্যার খবর সবার আগে পৌঁছেছিল ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে। ওয়াশিংটন সময় বিকেল ৩টা। লন্ডনে তখন রাত ১২টা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার খবর দেশের বাইরে যেসব বাংলাদেশি কূটনীতিক পান তাদের মধ্যে লন্ডন মিশনের কূটনীতিকরা অন্যতম। লন্ডন মিশনের খবর পেয়ে ফারুক চৌধুরী খুব ভোরে এই দুঃসংবাদটি জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে জানান। তার ধারণা ছিল- ড. ওয়াজেদ মিয়া তার পরিবার নিয়ে এ সময় জার্মানিতে অবস্থান করছেন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী খবর পেয়ে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে সানাউল হককে ফোন করেন এবং ফারুক চৌধুরীর কাছ থেকে পাওয়া সংবাদ তাকে জানান এবং শেখ হাসিনা ও অন্যদের জার্মানির সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দিতে অনুরোধ করেন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী লিখেছেন, সানাউল হক তাতে রাজি হলেন না। তিনি আরও লিখেছেন, সানাউল হকের কথায় মনে হচ্ছিল- তিনি শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের পারলে তখনই বাড়ি থেকে বের করে দেন। সেই সানাউল হক পরবর্তীকালে ঢাকায় ফিরে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সদস্য হয়েছিলেন।